ইরানি জনগণকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি : সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলছে ইসরায়েলি আগ্রাসন। দেশটি এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ইরানের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি হামলায় জড়িয়েছে ইসরায়েল। সবশেষ গেল অক্টোবরে একযোগে ইসরায়েলে দুই-শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের জনগণকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)।
রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে এক ফোনালাপে তিনি এ সম্বোধন করেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
টেলিফোন আলাপে দুই নেতা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট, বিশেষত গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রভাব এবং সমাধানের সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে মতবিনিময় করেন। এ ছাড়া ইরানি জনগণের সমৃদ্ধি ও সাফল্য কামনা করেছেন।
ইরনা জানায়, আলোচনায় সৌদি যুবরাজ ও ইরানি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ধারাবাহিক অগ্রগতি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত নিয়ে কথা বলেন। দুই দেশের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পর এটি ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ।
ফোনালাপে সৌদি যুবরাজের ‘ভাই’ সম্বোধন ইরান-সৌদি সম্পর্কের আরও উষ্ণতার প্রতীক হয়ে দেখা দিয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে আস্থা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে রিয়াদে আরব লীগ ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সম্মেলন শুরু হয়েছে। এই সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং গাজা ও লেবাননের জনগণের ওপর চলমান আগ্রাসন বন্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট।
টেলিফোনে আলাপে একপর্যায়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ইরান সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা সৌদি যুবরাজ সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করে তিনি বলেন, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সফর করা আমার জন্য গর্বের বিষয় হবে।’ এই আমন্ত্রণের মাধ্যমে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সম্পর্ক আরও জোরদার করার ইঙ্গিত মিলেছে।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতারা সোমবার (১১ নভেম্বর) থেকে সৌদি আরবে সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এই সম্মেলনে আরব লীগ ও ওআইসির সদস্যরা একত্রিত হয়ে গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে আলোচনা করবেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অর্জনের লক্ষ্যে একটি কার্যকর কৌশল প্রণয়ন করবেন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।
ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কের এই নতুন ধাপকে অনেকেই ঐতিহাসিক বাঁক হিসেবে দেখছেন। বছরের পর বছর বৈরী সম্পর্ক থাকার পর সৌদি আরব ও ইরান এখন একসঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এই সম্মিলিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুধু দুই দেশের জন্য নয় বরং গোটা অঞ্চলের জন্যই একটি শান্তি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করতে পারে।