প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল রিচেকের দাবিতে কর্মসূচির ঘোষনা

তানভীর তুহিন, ফরিদপুর:
ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল রিচেকসহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী রবিবার সকাল ১০ টায় কর্মসূচি ঘোষনা দিয়ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০২৩-এর তৃতীয় ধাপের ফলাফল প্রত্যাশিরা।

ফেইসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে তারা তাদের কর্মসূচি নিয়ে পোস্ট করেছেন। তাদের কর্মসূচির পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো-
কর্মসূচি: ডিপিই ঘেরাও এবং লাগাতার অনশণ কর্মসূচি। স্থান: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মিরপুর-০২। তারিখ:০৩ নভেম্বর ২০২৪, রোজ রবিবার। সময়: সকাল ১০ টা৷ আয়োজনে: ৩য় ধাপের ফলাফল প্রত্যাশি। মূল দাবী: ১) ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল রিচেক করতে হবে। ২) ১ম ও ২য় ধাপের মতো ৩:১/ ৪:১ অনুপাতে নিয়োগ দিতে হবে। ৩) পদসংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

জানাযায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০২৩-এর তৃতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২১ জেলার ফল প্রকাশিত হয়। এরপরই ফল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেক চাকরিপ্রার্থী। বিভিন্ন জেলা থেকে নানান অভিযোগ এসেছে বিভিন্ন সেট নিয়ে। সেটের পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, একেক উপজেলায় একেক সেটের পরীক্ষার্থীদের রেজাল্ট আসেনি। এর মধ্যে যমুনা, মেঘনা ও সুরমা অন্যতম।

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার পোষ্য কোটার এক পরীক্ষার্থী বলেন, আমার উপজেলায় আসন সংখ্যা ছিলো ৪০টি। সে হিসাবে পোষ্য কোটার ২০% এ নিয়োগ হওয়ার কথা ৮জন পোষ্য কোটাধারীর। আমরা ভাইবা দিয়েছি মাত্র ৭জন পোষ্য কোটার ছেলে প্রার্থী। হিসাব মতো আমাদের ১জন প্রার্থী কম রয়েছে মানে আমাদের ৭জনেরই নিয়োগ হওয়ার কথা৷ সেখানে আমাদের ৭জনের মধ্যে মাত্র ১জনের তথ্য আমি পেয়েছি যার চাকরি হয়েছে। সে মেঘনা গ্রুপের। আমি যমুনা গ্রুপে ছিলাম। আমার চাকরি কেন হলোনা বুঝলাম না। রিটেন মার্ক ৬২ বা ৬৩ ছিলো আর ভাইবা খুবই ভালো হয়েছে আমার। আমি কি যমুনা গ্রুপে থাকার কারনে চাকরিটা হলো না? আমার উপজেলায় যমুনা গ্রুপ থেকে কারোই চাকরি হয়নি। এটা কেমন কাহিনী হলো বুঝলাম না৷

নোয়াখালী জেলার কাউসার ইসলাম বাবু নামের এক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেন,
নোয়াখালী জেলার মেঘনা সেটে কারও রেজাল্ট আসেনি। এর আগে প্রিলির সময়ও এমন হয়েছে। রেজাল্ট পুনরায় মূল্যায়ন করার পর তা এসেছিল। ঠিক একই সমস্যা এখনো হয়েছে। তাই রেজাল্ট পুনর্মূল্যায়ন করা হোক।’

লক্ষ্মীপুর জেলায় মেঘনা সেটের মাকসুদুর রহমান নামে এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের মেঘনা সেটের কারও চূড়ান্ত রেজাল্ট আসেনি। এর আগে লিখিত পরীক্ষার রেজাল্টও প্রথমে আসেনি। পরে আমরা পুনরায় মূল্যায়ন করে প্রকাশ করলে আমাদের রেজাল্ট আসে। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি, রেজাল্ট পুনরায় মূল্যায়ন করার জন্য।

অন্যদিকে চাঁদপুর জেলা থেকে কয়েকজন যমুনা ও মেঘনা সেট নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, তাদের কারও ফল আসেনি।

চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক প্রার্থী সুরমা, মেঘনা ও যমুনা সেটে ফল পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন।

এ ছাড়া ঢাকা বিভাগের, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ জেলার একাধিক প্রার্থীও তাঁদের মেঘনা, সুরমা, যমুনা, পদ্মা সেট নিয়েও অভিযোগ করেছেন।

মাদারীপুরের শিবচর থেকে এক নারী প্রার্থী বলেন, লিখিত পরীক্ষাসহ মৌখিক পরীক্ষা অনেক ভালো দিয়েছিলাম। ভাইভার স্যারেরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট ছিলেন আমার ওপর, কারণ তাদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর আমি সঠিক এবং সাবলীলভাবে দিয়েছিলাম। এ ছাড়া আমার সার্টিফিকেটেও ফুল মার্কস থাকে। আমি একটি সুনামধন্য কলেজ থেকে আমার গ্র্যাজুয়েশন এবং পোস্ট-গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি। আসলে এত ব্যাখ্যা দেওয়ার একটাই কারণ, আমি সব ভালো দেওয়ার পরও রেজাল্ট আসলো না, আমার সেট ছিল মেঘনা এবং আমার জানা মতে মেঘনা সেটের কারোরই রেজাল্ট আসেনি। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার।’

অন্যদিকে সুরমা সেটের অভিযোগ নিয়ে শাইখুল আলম শারবিক নামের একজন ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি ঢাকা বিভাগ থেকে সুরমা সেটে বিজ্ঞান কোটা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি, কিন্তু রেজাল্ট আসেনি। অনেকেই দেখলাম বলছে, ঢাকা বিভাগে সুরমা সেটের রেজাল্ট আসেনি। তারপর আমার ফ্রেন্ডের সাথে যোগাযোগ করি ও মানিকগঞ্জের সুরমা সেট। মার্ক ছিল ৬৯। ওর রেজাল্ট আসছে। তাই ওকে বললাম, এডমিটের ছবি দিতে, যাতে অনেকের কনফিউশন দূর হয়। এখন দেখেন, যা ভালো বোঝেন।’

এ ছাড়া এর আগে লিখিত পরীক্ষায় যাদের ফল পুনর্মূল্যায়নের পরে এসেছে, তাদের একটি অংশ অভিযোগ করে বলে, আগের পরীক্ষার মতো এবারও তাদের ফলাফলে সমস্যা হয়েছে।

জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে এবার তিন ধাপে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে। তবে তৃতীয় ধাপের লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা হলেও দীর্ঘদিনে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়নি। চার মাসের বেশি সময় অপেক্ষা করছেন তৃতীয় ধাপের ফল প্রত্যাশীরা।

এর আগে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ অনুযায়ী, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মতো দ্রুত সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০২৩-এর তৃতীয় ধাপের (ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের জন্য তারা তিন মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *