শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, যার পরিমাণ প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে এই প্রাক্কলন করা হয়েছে।
রোববার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটির প্রধান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন।
প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই প্রতিবেদন আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল। আর্থিক খাতে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, সেটা ছিল একটা আতঙ্কিত বিষয়। আমাদের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কথা বলেননি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কমিটির প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে। সোমবার (আজ) সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিষয়ে তারা বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন। প্রতিবেদন জমার সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তিনি অর্থনীতি সংস্কারে সব পদক্ষেপ সমন্বিতভাবে পূর্ণাঙ্গ উপস্থাপনের সুপারিশ করেছেন
জানা গেছে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, সরকারি নথি এবং বৈশ্বিক প্রতিবেদন ব্যবহার করে অর্থ পাচারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে রিপোর্টে। এর আগে গত ২ নভেম্বর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানায়, গত ১৫ বছর ধরে প্রতি বছর দেশ থেকে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির তথ্য অনুযায়ী, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে ২০০৯-২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ গড়ে প্রায় ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।
অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা জানাতে প্রতিবেদন তৈরিতে গত ২৮ আগস্ট গঠিত হয় ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে তিন মাস সময় দেওয়া হয়।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির বাকি ১১ সদস্য হলেন- বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো কাজী ইকবাল, বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী।
শ্বেতপত্রে যা থাকছে
সরকারি অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা : অভ্যন্তরীণ সম্পদ, সরকারি ব্যয় (বিনিয়োগ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, ভর্তুকি ও ঋণের সুদ পরিশোধ), ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন।
মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য পরিধারণ : উৎপাদন, সরকারি ক্রয় ও সরকারিভাবে খাদ্য বিতরণ। বহিঃলেনদেন ভারসাম্য : রপ্তানি, আমদানি, প্রবাসী আয়, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও ঋণপ্রবাহ।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি : চাহিদা, সরবরাহ, মূল্য নির্ধারণ, খরচ ও ক্রয় চুক্তি।
বেসরকারি বিনিয়োগ : ঋণপ্রাপ্তি, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও লজিস্টিকস।
কর্মসংস্থান : দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে মজুরি; যুব কর্মসংস্থান।
এর আগে, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে জানান, ‘অনেকের কাছে ধারণা হয়েছে, এই কমিটি বোধহয় দুর্নীতি ধরার কমিটি, আমি আপনাদের পরিষ্কার বলে দিতে চাই, এটা দুর্নীতি ধরার কমিটি না। এটা হলো, দুর্নীতি কেন হয়েছে এবং দুর্নীতির মাত্রা কী, সেটা বলবে। কিন্তু কে দুর্নীতি করেছে, কেন করেছে, এটা বলা আমাদের দায়িত্ব না। এটা বলার জন্য সরকারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান আছে।’