মো.শিফাত মাহমুদ ফাহিম,বিশেষ প্রতিনিধি:
নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মেলায় এলাকাবাসী সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষদের সাথে প্রতারণা অভিযোগ উঠেছে মেলা কমিটির বিরুদ্ধে।প্রতি বছরের মতো পৌষমাসের শেষ দিন আর মাঘ মাসের প্রথম দিন এই দুইদিন মিলে উপজেলার ০২ ভোঁপাড়া ইউনিয়নের নিকটস্থ জামগ্রাম নামক স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনরা রাম ও শীতার তীর্থ পাওয়ার আশায় নানা ধরনের পূজা অর্চনা পাশাপাশি গ্রামীণ মেলা বসিয়ে আসছে প্রায় ২ শত বছর পূর্ব প্রাচীনকাল থেকে।
তবে এই এলাকায় মেলার নিয়ন্ত্রণ থাকে এলাকার ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা,এখান থেকে বঞ্চিত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা এমন অভিযোগ করেন অনেকেই।এই মেলা থেকে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করে মেলা নিয়ন্ত্রক কমিটির লোকজন আর তা নয় ছয় হিসাব দিয়ে ভরেন নিজেদের পকেট।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে জানাযায়,এবছর মেলার অনুমতি প্রথম ধাপে জেলা প্রশাসক দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ ছিলো মেলা কমিটির সভাপতি,সেক্রেটারিসহ আরও লোকজনদের নিয়ে।আর এই কারনে তা দ্বিতীয় ধাপে অনুমতি বাতিল করে দেন জেলা প্রশাসক।জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামলা হোসেন এসে অশ্লীলতা ছড়ানোর কয়েকটি স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়।
তারপরও সোহাগ মেম্বার ও তার অনুসারীরা চুরি ছেঁচড়মি করে অশ্লীল অনুষ্ঠান পরিচালনা করে এলাকার যুব সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে তারা।
মেলা কমিটির সভাপতি প্রতারক মো. রুহুল আমিন ওরফে সোহাগ মেম্বার এর বিরুদ্ধে রয়েছে ধর্ষণ, মাদক- সেবন থেকে শুরু করে নানা অভিযোগ আর তিনি অভিযোগে অভিযুক্ত। গত ০৫ আগস্টের পর থেকে নিজেকে বিএনপির ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা দাবি করে এলাকায় নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছে তিনি।আর এর ফলস্বরূপ প্রায় ১ মাস পূর্ব নেশা করে মাতলামি করায় এলাকার যুব সমাজ তাকে পেঁদানি দেয়।
সব গল্পের ইতি টেনে, সব ইতিহাস কবর রচন করে এবার পৌষসংক্রান্তি মেলার কয়েকদিন আগ থেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযুক্ত সোহাগ মেম্বার ও ০২নং ভোঁপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন ও তাদের নির্দিষ্টি লোকজন মেলাকে কেন্দ্র করে এক বিশাল রাফেল “ড্র” এর আয়োজন করেন।রাফেল “ড্র” এর প্রতিটি টিকিটের মূল নির্ধারণ করেন তারা ২০/- টাকা করে।
সেই সাথে এলাকার যুবকদের আকৃষ্ট করতে ১ম পুরষ্কার হিসাবে রাখা হয় একটি ১০০ সিসির মোটরসাইকেল।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শোরুমে এই প্রতারক সোহাগ ও তার অনুসারীরা ৫০% টাকা পরিশোধ করে মোটরসাইকেল নিয়ে এসে রাফেল ড্র এর স্টেজে শোআপ করে সবাইকে বোকা বানায়।সেই সাথে বাকি পুরষ্কার গুলোও একই কায়দায় বিভিন্ন ভাবে প্রতারণা মাধ্যমে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
মোটরসাইকেল ১ম পুরষ্কার হওয়ায় ব্যাপক সাড়া পড়ে আর তাই মাত্র কয়েক দিনেই টিকিট বিক্রি করে হাতিয়ে নেয় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা।
মেলার তৃতীয় দিন (১৬ জানুয়ারি) রাফেল “ড্র” (লাটারি) খেলার টিকিট (গ্রহক) ক্রেতাদের উপস্থিততে মেলার নির্দিষ্টি স্থানে ড্র করে বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ কথা ছিলো।কিন্তু টিকিট ক্রেতাদের অভিযোগ তারা এসে দেখেন উক্ত স্থানে কেউ নেই এমন কি খেলার কোনো নাম গন্ধ ও নেই।তারা আরও বলেন আমরা দূরদূরান্ত থেকে এসেছি।আমাদের মাঝে অনেকেই ৮ থেকে ১০টি এমন কি তারও অধিক টিকিট কেটেছে। কিন্তু আমাদের সাথে এভাবে প্রতারণা করবেন বিএনপির এই নেতা সোহাগ মেম্বার তা আমাদের কখনো কল্পনায় ছিলো না।পরবর্তী বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের রাফেল ড্র এর প্রতারণার স্টেজ গুড়িয়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীসহ এলাকাবাসীরা বলেন, সোহাগ মেম্বার ও আওয়ামী নেতা ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন মিলে সাধারণ মানুষদের সাথে যে প্রতারণা করেছে তা সত্যিই লজ্জাজনক।তাই এদের অতিদ্রুত বিচার মুখোমুখি করা দরকার।আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী মেলার বদনাম ঘটিয়েছে যা বিগত দিনে কোনো দল বা গোষ্ঠীর লোকজন ঘটাতে পারেনি।এই মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসেন আর এই মেলার যদি এমন একটি বদনাম হয় তাহলে আগামীতে মেলায় লোকজন পাওয়া যাবেনা।জনশূন্য হয়ে পড়বে এই মেলা।
আমরা চাই আওয়ামী নেতা নাজিমুদ্দিন চেয়ারম্যান আর বিএনপি নামধারী নেতা সোহাগ মেম্বার ও তাদের অনুসারীরা মিলে যে নেক্কারজনক কাণ্ড ঘটিয়েছে তার যথাযথ বিচার।
এ বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলা হলে তারা বলেন, নির্দিষ্টি তথ্য প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ভাবে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযুক্ত (প্রতারক) সোহাগ মেম্বার আত্রাই উপজেলা জিয়া সাইবার ফোর্সের সহ-সভাপতি এবং ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা যায়। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত সোহাগ মেম্বারের মুঠোফোনে একাধিক বার কল দেওয়া হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।