মৎস্য ঘের দখলের চেষ্টা, গণপিটুনিতে নিহত ১

সাতক্ষীরার দেবহাটায় মৎস্য ঘের দখলের চেষ্টাকালে গণপিটুনিতে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। এসময় সেনা সদস্যরা ১৫ টি হাত বোমা, ৩০টি ছোট হাতবোমাসহ বিভিন্ন অস্ত্র শস্ত্র উদ্ধার করে।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) উপজেলার খলিশাখালীতে এ ঘটনা ঘটে। 


নিহত কামরুল ইসলাম (৪৮) খলিশাখালী গ্রামের বকর গাজীর ছেলে। 

স্থানীরা জানান, শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে সেনাবাহিনী খলিশাখালীর মৎস্য ঘেরে অভিযান চালায়। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে বোমা ফাটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে দখলকারীরা। সে সময় স্থানীয়রা কামরুলকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। এতে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহতের স্ত্রী মর্জিনা খাতুনের অভিযোগ, চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের লোকজন তাকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মাদ বলেন, ৫ আগস্টের পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবনতি হওয়ার সুযোগে খলিশাখালীতে ভূমিদস্যুরা ঘের দখল করে। সেনাবাহিনী বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র উদ্ধারে নেমেছে। এ সময় গণপিটুনিতে কয়েকজন আহত হয়। পরে সখিপুর হাসপাতালে কামরুল নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।


সাতক্ষীরা সেনাক্যাম্প সূত্র, স্থানীয় সূত্র ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, একটি বড় গ্রুপ ডাকাতি, লুটপাটসহ ওই এলাকার জনগণের ওপর নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এছাড়াও, অন্যান্য অপরাধীরা সেখানে আশ্রয় নেয় বলে জানা যায়। গোয়েন্দা তথ্য মোতাবেক জানা যায় যে, এই গ্রুপের সঙ্গে অস্ত্র থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।


এই তথ্যের ভিত্তিতে, সাতক্ষীরা সেনা ক্যাম্পের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আরিফুল হকের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের সহযোগিতায় একটি লার্জ স্কেল অপারেশন পরিচালিত হয়। সিকিউরিটি ফোর্সের দলটি পহেলা নভেম্বর ভোর সাড়ে তিনটার দিকে খালিশাখালীসহ দেবহাটা উপজেলার তিনটি অবস্থান থেকে অপারেশন চালানো হয়। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে অপরাধীরা সিকিউরিটি ফোর্সের দিকে ইট-পাথর ছুড়তে থাকে। তারা সিকিউরিটি ফোর্সের ওপর দেশীয় বোমা এবং ককটেল বোমা ছুড়ে ঘের এলাকার থেকে পালানোর চেষ্টা করে। এসময়  সিকিউরিটি ফোর্সের থেকে মুক্তি পেতে পাইপগান দিয়ে দূর থেকে গুলি চালায়।

এক পর্যায়ে, হাত বোমা ছুড়েছিল যে ব্যক্তি তাকে স্থানীয় বাসিন্দারা সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে আটক করে মারধর করতে শুরু করে। সিকিউরিটি ফোর্স তখন হস্তক্ষেপ করে অভিযুক্তকে হেফাজতে নেয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায়, স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহায়তায় তাকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এছাড়া, সিকিউরিটি ফোর্সের দলটি ধাওয়া করে বেশ কিছু অপরাধীকে সফলভাবে আটক করে, যদিও বাকি ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। আটক অপরাধীদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দেবহাটা থানায় হস্তান্তর করা হয়। 


এছাড়া জানা যায় যে, আহত কামরুল পরবর্তীতে ক্লিনিকে মারা যায়। তিনি একজন দণ্ডিত অপরাধী। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা রয়েছে।


আটক ব্যক্তিরা হচ্ছেন: মো. নুরুজ্জামান, মো. সোহেল, মো. মেহেরাব, হাসিবুল হাসান সবুজ, মো. রবিউল আওয়াল, হোসেন। এদের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে।


এ সময় জব্দ করা হয়, পাঁচটি দেশীয় রাম দা, গান পাউডার ৮০০ গ্রাম,  বিস্ফোরক উপকরণ (ওয়্যার, ব্যাটারি এবং খালি কেস)  দেশীয় হ্যান্ড গ্রেনেড ১৫টি, ছোট দেশীয় হ্যান্ড গ্রেনেড: ৩৯টি, স্প্লিন্টার: ৭ প্যাকেট, মার্বেল স্প্লিন্টার এক প্যাকেট ও  মোবাইল ফোন ৪টি।

এ বিষয়ে নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম বলেন, আমার লোকজন সেখানে যায়নি। শুনেছি গণপিটুনিতে একজন মারা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *