মূলধন ১২ হাজার কোটি টাকা হ্রাস

পুঁজিবাজারের অব্যাহত মন্দার কারণে বিনিয়োগকারীরা চরমভাবে আতঙ্কে আছে। শঙ্কিত তারা বিনিয়োগকৃত অর্থের বা পুঁজির নিরাপত্তা নিয়েই। তাই গেল সপ্তাহে মন্দায় বিক্রির চাপে ছিল পুঁজিবাজার। ৬৫ শতাংশ বিনিয়োগকারী শেয়ার ছেড়ে দেয়ার জন্য মরিয়া ছিল। কিন্তু বিপরীতে ক্রেতা ছিল মাত্র ৩৫ শতাংশ। তবে ‘এ’ থেকে ‘জেড’ সবগুলো শ্রেণীর শেয়ারই ছিল গড়ে ৭৫ শতাংশ বিক্রির চাপে। পুঁজিবাজারের ২০ খাতের মধ্যে ১৯ খাতের শেয়ারেই বিনিয়োগকারীরা লোকসানে রয়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর পতনের শিকার। সার্বিকভাবে ডিএসইতে বাজারমূলধন কমেছে ১.৮৪ শতাংশ বা ১২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা বলে ডিএসইর সাপ্তাহিক পর্যালোচনার তথ্য থেকে জানা গেছে।

সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী সপ্তাহে পতনের জালেই ছিল দুই পুঁজিবাজারের সূচক। সিএসইতে সূচক পতনে সেঞ্চুরি হয়। ডিএসইর সূচক এখন ৫১শ’ পয়েন্টের সীমান্তে অবস্থান করছে। গেল সপ্তাহে কমেছে ডিএসইর সব ক’টি সূচকও। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪৩.৩৮ পয়েন্ট বা ২.৭৩ শতাংশ। এই সূচক এখন পাঁচ হাজার ১১৪.৬০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৫১.২২ পয়েন্ট বা ২.৬৫ শতাংশ। এটি এখন এক হাজার ৮৭৯.১৮ পয়েন্ট রয়েছে। আর ডিএসইএস সূচক কমেছে ৩০.১২ পয়েন্ট বা ২.৫৭ শতাংশ। এসএমই সূচক ৬১.৬০ পয়েন্ট কমে এখন এক হাজার ৫১.৬৪ পয়েন্টে। তবে সূচক পতনের পরও ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইর বাজারমূলধন ১.৮৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকায়। সপ্তাহের শুরুতে এ মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬৯ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে টাকায় গড়ে বেড়েছে ২০.৬৮ লাখ টাকা বা সাড়ে ৬ শতাংশ। ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬৯৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ২৭২ কোটি দুই লাখ টাকা। এক সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ৪২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৩৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৩১৮ কোটি টাকা। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৩টি কোম্পানির, কমেছে ৩০৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টি কোম্পানির। বিক্রির চাপ বেশি থাকায় শেয়ার বেচাকেনা ১৮ কোটি ৫৯ লাখ বেড়েছে।

সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানি
গেল সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ইফাদ অটোস পিএলসির। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২৪.০৯ শতাংশ বলে ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এই তথ্য জানা গেছে। সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ২২.৭৬ শতাংশ, রানার অটোমোবাইলসের ১৫.০৫ শতাংশ, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডের ১০.২৮ শতাংশ, ফার কেমিক্যালের ১০.১৪ শতাংশ, ফারইস্ট নিটিংয়ের ১০.০০ শতাংশ, পূবালী ব্যাংকের ৮.৩৩ শতাংশ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৭.৮৯ শতাংশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ৭.৪৪ শতাংশ এবং খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৭.০৭ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।

সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে নিউলাইন ক্লোথিংস লিমিটেডের। কোম্পানিটির শেয়ারদর ২৫.৯৩ শতাংশ কমেছে। সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২৩.৮৬ শতাংশ, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২৩.০৮ শতাংশ, বারাকা পাওয়ারের ১৯.৩০ শতাংশ, হামি ইন্ডাস্ট্রিজের ১৮.৭০ শতাংশ, এস্কয়ার নিটের ১৮.৫২ শতাংশ, এমএল ডাইংয়ের ১৮.৩৯ শতাংশ, সিভিও পেট্রো কেমিক্যালের ১৭.৫৩ শতাংশ, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালের ১৭.৩১ শতাংশ এবং আজিজ পাইপস লিমিটেডের ১৬.৯৮ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।

ব্লক মার্কেটে ১০ কোম্পানির ৭১.৩২ কোটি টাকা
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ১০ কোম্পানির। কোম্পানিগুলোর মোট ৭১ কোটি ৩২ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে বলে ডিএসইর সাপ্তাহিক পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানিগুলো হলো, লাভেলো আইস্ক্রিম, ব্যাংক এশিয়া, বেক্সিমকো, খান ব্রাদার্স, মিডল্যান্ড ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, ন্যাশনাল ব্যাংক, ম্যারিকো, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স এবং আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। আর কোম্পানিগুলোর মধ্যে লাভেলো আইস্ক্রিমের সবচেয়ে বেশি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটির লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ৯৩ টাকা ৫০ পয়সা। ব্যাংক এশিয়ার ১৪ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১৮ টাকা ১০ পয়সায়। বেক্সিমকোর ১৩ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা। আলোচ্য সপ্তাহে ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া অন্য ৭টি কোম্পানির মধ্যে- খান ব্রাদার্সের ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার, মিডল্যান্ড ব্যাংকের দুই কোটি ৭৮ লাখ ৭০ হাজার টাকার, স্কয়ার ফার্মার দুই কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার, ন্যাশনাল ব্যাংকের দুই কোটি ৩৪ লাখ টাকার, ম্যারিকোর দুই কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকার, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের দুই কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার এবং আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের এক কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

চট্টগ্রাম স্টকে সূচকের পতনে গড়ে তিন সেঞ্চুরি
গত দুই সপ্তাহের মতোই গত সপ্তাহেও চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটের (সিএসইর) ভালো যায়নি। সবগুলো সূচকই তিন সেঞ্চুরির বেশি হারে পয়েন্ট হারিয়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানি দর পতনের শিকার ছিল। লেনদেনেও খরা ধরেছে। সিএএসপিআই ৫১৮.৯ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ১৪ হাজার ৩০২.৫৯ পয়েন্টে, সিএসই-৩০ সূচক ৩৬৬.৮৭ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ১১ হাজার ৭৩৯.৩৫ পয়েন্টে এবং সিএসসিএক্স ৩০৬.৮৬ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ৮ হাজার ৭০৫.৬৯ পয়েটে নেমেছে। পুরো সপ্তাহে এক কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার ১৭০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ১৪১ টাকা বাজারমূল্যে। ৩১০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেয়। এদের মধ্যে দর বৃদ্ধিতে ছিল ৫৬টি, দরপতনের শিকার ২৩৭টি এবং দর অপরিবর্তিত হলো ১৭টি। বাজারমূলধনে বর্তমানে এ শ্রেণীর কোম্পানির ৭৫.৩১ শতাংশ, বি শ্রেণীর ১৫.৫৯ শতাংশ, এন শ্রেণীর কোম্পানির ৭.১৫ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর কোম্পানির ১.৯৪ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে।

রয়্যাল ক্যাপিটালের পর্যবেক্ষণ
রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, আাগের সপ্তাহের তুলনায় বিদায়ী সপ্তাহে ২.৭৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সাপ্তাহিক গড় টার্নওভার ৬.৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও, বাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কম ছিল। বেশির ভাগ সেক্টরের রিটার্ন হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক নীতিগত হার বৃদ্ধির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিনিয়োগকারীরা একটি সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে। যদিও ডিএসই, কিছু কোম্পানির তাদের ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণের পর কিছু স্ক্রিপ ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে উন্নীত করেছে। একটি সেক্টর বাদে সবগুলো সেক্টর হ্রাস পেয়েছে। সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলা যায় যে, আগামী সপ্তাহে বাজারের সূচক কিছুটা নিম্নমুখী হওয়ার পাশাপাশি কম পরিমাণে লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *