ফেসবুক লাইভে বাঁচার আকুতি, এক ঘণ্টা পর গাছে মিলল লাশ

নওগাঁর পত্নীতলায় ফেসবুক লাইভে বাঁচার আকুতি জানানোর এক ঘণ্টা পর গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় সুমন হোসেন নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, সুদ-আসলের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।

রোববার (১৭ নভেম্বর) উপজেলার পদ্মপুকুর বালকাপাড়া গ্রাম থেকে রাত ১১টার দিকে সুমনের মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। নিহত সুমন হোসেন বিল ছাড়া গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দিনের ছেলে। তিনি নজিপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে পত্নীতলা থানার ওসি শাহ মো. এনায়েতুর রহমান কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহত সুমনের সুরতহাল তৈরি করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানতে পারব। এ ছাড়া তার পরিবার থেকে অভিযোগ দেবে। এরই মধ্যে আমরা তদন্ত শুরু করে দিয়েছি।

জানা গেছে, সুমন হোসেন নজিপুর পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড মসজিদ মার্কেটে ব্যবসা করেন। মরদেহ উদ্ধারের প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন সুমন। সে সময় ছিনতাইকারীরা তার কাছে থাকা ১০ লাখ টাকা ছিনতাই করে তাকে হত্যা করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সুমনের ফেসবুক লাইভের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে।

সুমনের ৫ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভ থেকে জানা গেছে, বুলবুল নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে সুদের বিনিময়ে ৭০ হাজার টাকা ধার করেন সুমন। ইতোমধ্যে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি। এরপরও টাকা দাবি করে বুলবুল। বিভিন্ন সময় ক্ষমতার দাপট দেখাতেন তিনি। বুলবুল নিহত সুমনের কাছ থেকে ১০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা পান বলে চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আট লাখ টাকা দাবি করে জোর করে স্ট্যাম্প করে নেন। তারপরও সুমন ভয়ে তাকে টাকা দিতে চেয়েছিল। এক পর্যায়ে রাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সুমনকে ধাওয়া করে বুলবুল ও তার লোকজন। কিন্তু সুমনের কাছে ১০ লাখ টাকা আছে এটা বুলবুল ছাড়া কেউ জানত না বলে লাইভে জানান সুমন। তখন তিনি বলেন, বুলবুল ভাই আমাকে এভাবে মারতে পারলেন আপনি। আমার মা, বোন ও ভাগিনাকে কে দেখবে ভাই। ওই রেকর্ডে দাবি করা হয়, আমার যদি মৃত্যু হয়, তাহলে বুলবুল দায়ী।

মনের প্রতিবেশী রুহুল আমিন ও রুবেল হোসেন বলেন, আমরা চারজন আমাদের গ্রামের এক জায়গায় আড্ডা দিচ্ছিলাম। এ সময় রাত ১০টার দিকে ফোন দিয়ে সুমন বলতেছে ভাই আমাকে বাঁচান। কি সমস্যা জানতে চাইলে, বুলবুল নামের একজন আমার থেকে ১০ লাখ টাকা কেড়ে নিছে ও আমাকে মারার জন্য খুঁজতেছে। এ ছাড়া লাঠি-চাকু নিয়ে তার সঙ্গে আরও ৮/১০ জন আছে। ফোনে অনেকবার বলছে বুলবুল আমাকে মেরে ফেলে দিবে ভাই। আমাকে চাকু নিয়ে খুঁজতেছে। আমি ধান বাড়ির ভেতরে শুয়ে থেকে ফোন দিছি। যেভাবেই হোক আমাকে বাঁচা। এর পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে নাদৌড় নাপিত পকুরা নামক স্থানে গিয়ে কাঁঠাল গাছে রশি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। তারপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন।

পত্নীতলা উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য মারুফ মোস্তফা বলেন, সুমন নজিপুর সরকারি কলেজে ডিগ্রি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিল। মৃত্যুর আগে সে ফেসবুক লাইভে ছাত্র-জনতার কাছে বিচার চেয়েছিল। এই স্টেটমেন্ট দেওয়ার পর তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এটা পুরোটাই হত্যাকাণ্ড। তাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই।

ওসি শাহ মো. এনায়েতুর রহমান আরও বলেন, ফেসবুক আইডিটি আসলেই সুমনের কিনা কিংবা লাইভের অডিওর ওই ব্যক্তিটি কে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বুলবুল নামে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে সুমনের আসলেই কোনো আর্থিক লেনদেন ছিল কিনা তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এসবের সত্যতা বের হলেই আসল রহস্য উন্মোচন হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *